প্রাতঃকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত সময়কালকে ছয় ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- (১) প্রাতঃ (২) পূর্বাহ্ণ (৩) মধ্যাহ্ন (৪) অপরাহ্ণ (৫) সায়াহ্ন ও (৬) নৈশ।
সময়কালের এই ছয়টি বিভাগের দিকে লক্ষ রেখে নিত্যকর্মকেও ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- (১) প্রাতঃকৃত্য (২) পূর্বাহ্ণকৃত্য, (৩) মধ্যাহ্নকৃত্য (৪) অপরাহ্ণকৃত্য (৫) সায়াহ্নকৃত্য ও (৬) নৈশকৃত্য।
১। প্রাতঃকৃত্য: সূর্যোদয়ের কিছু আগে ঘুম থেকে উঠে বিছানার উপরে পূর্ব বা উত্তরমুখ হয়ে বসে ঈশ্বর বা দেব- দেবীদের স্মরণ করে মন্ত্র পাঠ করতে হয়। এ জন্য ধর্মগ্রন্থে মন্ত্র বা শ্লোক রয়েছে। নিচে একটি মন্ত্র সরলার্থসহ দেয়া হলো:
ব্রহ্মা মুরারিত্রিপুরান্তকারী
ভানুঃ শশী ভূমিসুতো বুধশ্চ।
গুরুচ শুরুঃ শনিরাহুকেতুঃ
কুর্বেন্তু সর্বে মম সুপ্রভাতম্ ॥
সরলার্থ: ব্রহ্মা, মুরারি (কৃষ্ণ), ত্রিপুরাসুরের বিনাশকারী শিব, সূর্য, চন্দ্র, ভূমিপুত্র বুধ, গুরু বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, রাহু, কেতু সকলে আমার প্রভাতটিকে যেন সুন্দর করেন।
একক কাজ: প্রাতঃকালের মন্ত্রটি আবৃত্তি কর। |
এরপর গুরচকে স্মরণ করে ঘর থেকে বাইরে এসে পৃথিবীকে ও সূর্যকে প্রণাম করতে হয়। প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যায় পিতামাতাকে প্রণাম করতে হয়। তারপর হাত-মুখ ধুয়ে, স্নান করে পরিষ্কার জামাকাপড় পরতে হয়।
২। পূর্বাহ্ণকৃত্য: প্রাতঃকৃত্যের পরে এবং মধ্যাহ্ন বা দুপুরের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে যে সকল কাজ করা হয়, তাই পূর্বাহ্ণকৃত্য। এই সময়ে প্রার্থনা, উপাসনা ও পূজা করতে হয়। এই কৃত্য প্রতিদিন পরিবারের সকলেরই পালন করা উচিত। তারপর দিনের অন্যান্য কাজকর্ম করতে হয়। যেমন-আহার করা, কর্মস্থলে যাওয়া, গৃহস্থালির কাজকর্ম করা, অধ্যয়ন বা বিদ্যালয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
একক কাজ: তোমার পূর্বাহ্ণকৃত্যের একটি তালিকা তৈরি কর। |
৩। মধ্যাহ্নকৃত্য: পূর্বাহ্ণের পর এবং অপরাহ্ণের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে যে কাজ করা হয়, তা-ই মধ্যাহ্নকৃত্য। এই সময়টাকে বলে দুপুর। দুপুরের কাজ খাওয়া-দাওয়া এবং বিশ্রাম করা। যদি দুপুরে কোনো অতিথি আসে তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে খাওয়াতে হয়। কারণ শাস্ত্রে বলে, অতিথি নারায়ণ, অতিথির সেবা করলে ঈশ্বরের সেবা করা হয়।
৪। অপরাহ্ণকৃত্য: দুপুরের পর এবং সায়াহ্নের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে যে কাজ করা হয় তাকেই বলে অপরাহ্ণকৃত্য। এই সময়টাকে বলে বিকাল, এই সময়ে নিজের এবং পরিবারের প্রয়োজনীয় কাজ করতে হয়। এছাড়া প্রতিদিন বিকেলে খেলাধুলা, ব্যায়াম বা ভ্রমণ করলে শরীর ভালো থাকে।
৫। সায়াহ্নকৃত্য: সায়াহ্ন মানে সন্ধ্যা। সন্ধ্যাকালে আবার হাত-মুখ ধুয়ে পরিচ্ছন্ন হতে হবে। তারপর ঈশ্বরের উপাসনা করতে হবে। সাধারণ কথা, স্তব বা গানে শ্রদ্ধা-ভক্তিতে ঈশ্বরের গুণগান করতে হবে। নিচে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি গান তুলে ধরা হলো:
ধায় যেন মোর সকল ভালোবাসা
প্রভু, তোমার পানে, তোমার পানে, তোমার পানে।
প্রভু, তোমার কানে, তোমার কানে, তোমার কানে।
চিত্ত মম যখন যেথা থাকে সাড়া যেন দেয় সে তব ডাকে,
যত বাঁধন সব টুটে গো যেন
প্রভু, তোমার টানে, তোমার টানে, তোমার টানে।
বাহিরের এই ভিক্ষা-ভরা থালি এবার যেন নিঃশেষে হয় খালি,
অন্তর মোর গোপনে যায় ভরে।
প্রভু, তোমার দানে, তোমার দানে, তোমার দানে।
হে বন্ধু মোর, হে অন্তরতর, এ জীবনে যা কিছু সুন্দর
সকলই আজ বেজে উঠুক সুরে
প্রভু, তোমার গানে, তোমার গানে, তোমার গানে ॥
দলীয় কাজ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের শিক্ষাসমূহ চিহ্নিত কর। |
৬। নৈশকৃত্য: সন্ধ্যার পর থেকে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সময়কালের কাজকে নৈশকৃত্য বলা হয়। এ সময়ে অধ্যয়ন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ করা হয়। রাত্রের আহার গ্রহণ করতে হয়। তারপর শয়ন করে শ্রীবিষ্ণুর 'পদ্মনাভ' নামটি উচ্চারণ করতে হয়। কারণ শাস্ত্রে বলা হয়েছে- 'শয়নে পদ্মনাভঞ্চ'।
নতুন শব্দ: প্রাতঃকৃত্য, মুরারি, রাহু, কেতু, পূর্বাহ্ণকৃত্য, মধ্যাহ্নকৃত্য, অপরাহ্ণকৃত্য, সায়াহ্ন।
Read more